আজ বৃহস্পতিবার, ২১শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

হকার ইস্যুতে আবারও সংঘর্ষের আশংকা!

সংবাদচর্চা রিপোর্ট: গত বছর হকার ইস্যুকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জে ঘটে ছিলো রক্তক্ষয়ী সংর্র্ঘষ। এতে পুলিশ, রাজনীতিবিদ সাংবাদিক সহ আহত হয়েছিলো প্রায় শতাধিক মানুষ। আবারও সেই সংর্ঘষের শঙ্কায় রয়েছে নগরীর সাধারণ মানুষ।

সম্প্রতি দেখা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের পূর্ব ঘোষনা অনুযায়ী নগরীর প্রাণ কেন্দ্র বঙ্গবন্ধু সড়কের দুই ধারের ফুটপাতে হকার মুক্ত করার লক্ষ্যে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছেন জেলা পুলিশের সদস্যরা। সেখানে ছাড় দেওয়া হয়েনি কাউকে। ফুটপাতে অবৈধ স্থাপনাও উচ্ছেদ করেছে পুলিশ সদস্যরা। আর এই উচ্ছেদ নিয়েই সাধারণ মানুষের মনে শঙ্কা কাজ করছে।

ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, গত বছরের ১৬ জানুয়ারী ফুটপাতে হকার বসাকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী পন্থীদের মধ্যে ব্যাপক সংর্ঘষ হয়। যেখানে মেয়র আইভী সহ আহত হয়ে প্রায় শতাধীক লোক। এর আগের দিন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান শহরে ফুটপাতে হকারদের বসার নির্দেশ দেয়ার পর হকারদের ঠেকাতে রাস্তায় নেমেছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নগর ভবন থেকে কয়েকশ নেতাকর্মী নিয়ে শহরের চাষাড়া দিতে যেতে থাকলে নগরীর বঙ্গবন্ধু সড়কের সামনে আসলে প্রথমে শুরু হয় ইট পাটকেল ছুড়া। পরবর্তীতে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং চরম সংর্ঘষের আকার ধারণ করেন। পরবর্তিতে কয়েক রাউন্ড ফাকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন পুলিশ। এ সময়ে প্রায় ২ঘন্টা রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ ছিলো। শহরে আগত অনেক মানুষকে অবস্থান নিতে হয়েছে মার্কেটের গলি থেকে বিভিন্ন দোকানের ভিতরে। যা ছিলো আতঙ্কে একটি বিষয়।

সংর্ঘষের আগের দিন মেয়র আইভীকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, হকাররা নারায়ণগঞ্জে বসবে, এটা তার অনুরোধ নয়, এটা তার নির্দেশ। মেয়র আইভীও জবাব দেন এভাবে যে, নারয়ণগঞ্জ শহর শামীম ওসমানের এলাকা না। এখানে তার নির্দেশ চলবে না। দুই নেতার অনড় অবস্থানের কারণে সকাল থেকেই নগরীতে ছিল উদ্বেগ উৎকণ্ঠা। চাষাঢ়ায় শহীদ মিনার এলাকায় অবস্থান নেয় পুলিশও। বিকাল ৪ টা ১৮ মিনিটে নগর ভবনের সামনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও কাউন্সিলরদের নিয়ে অবস্থান নেন মেয়র আইভী। ওখান থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম আবু সুফিয়ান আইভীর পক্ষে কয়েকশ নেতাকর্মীদের নিয়ে শোডাউন করে চাষাড়ার দিকে আসতে থাকেন। পরে নেতাকর্মীদের নিয়েই আইভী হকার উচ্ছেদ করতে করতে চাষাড়ার দিকে আসতে থাকেন। এসময় আইভীর সঙ্গে সিটি করপোরেশন কর্মকর্তা, পুলিশ সদস্যরাও ছিলেন। অপর দিকে হকার এবং শামীম ওসমানের অনুসারীরা অবস্থান নিয়েছিলেন চাষাঢ়া শহীদ মিনারে। আইভী যখন চাষাঢ়া সায়েম প্লাজার সামনে আসেন, তখন শামীম ওসমানের লোকজন আইভীর লোকজনদের বাধা দেয়। এসময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়।

সর্বশেষ দেখা যায়, পবিত্র রমজান মাসে মানবিক দিক বিবেচান করে বঙ্গবন্ধু সড়ক সহ নগরির আশপাশ এলাকার ফুটপাতে হকারদে বসতে দেওয়া হয়েছিল এবং সেই সময় পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা বলেছিলেন পবিত্র ঈদের পরপরই বঙ্গবন্ধু সড়ক সহ অন্যান্য সড়কের ফুটপাত দখল করে রাখা হকারদে উচ্ছেদ করা হবে। নগরীর সাধারণ মানুষ অত্যন্ত শৃঙ্খলভাবে ফুটপাত দিয়ে চলাচল করতে পারে সেই লক্ষ্যেই ফুটপাত হকার মুক্ত করা হবে। সেই পূর্ব ঘোষনা অনুযায়ী ১৫ জুন দিন সকাল থেকেই হকার উচ্ছেদ পরিচালনা করেন জেলা পুলিশ। আর এই নিয়েই শঙ্কা কাজ করছে সাধারণ মানুষের মনে। আগেও হকার উচ্ছেদ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল আবারও কি এই উচ্ছেদ নিয়ে একই অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে নারায়ণগঞ্জ বাসীকে?
তবে এ বিষয়ে হার্ড লাইনে আছেন পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ যিনি উচ্ছেদ কালিন সময়ে সাংবাদিকদের বলেন, চাষাড়া থেকে ২নং রেল গেইট, ডিআইটি ও নিতাইগঞ্জ পায়ে হেটে যেতে সময় লাগে ১৫ থেকে ২০ মিনিট। অপর দিকে ঠিক একই গন্তব্যে রিক্সাযোগে যেতে সময় লাগে ৩০ মিনিটের মতো। বঙ্গবন্ধু সড়কের দুই ধারের ফুটপাত যদি হাকার মুক্ত থাকে সেই ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ পায় হেটে তাঁদের নিজ নিজ গন্তব্যে অল্প সময়ের মধ্যে পৌছাতে পারবে। আমরা গরীব সাধারণ হকারদের বিরুদ্ধে নই। হকারদের প্রতি আমার আহ্বান থাকবে আপনারা বঙ্গবন্ধু সড়কের দুই ধারের ফুটপাত ব্যতিত নির্দিষ্ট একটি স্থানে বসেন। যারা হকারদের পক্ষে কথা বলবেন তাঁদের কাছে অনুরোধ আপনারা হকারদের বসার জন্য নির্ধারিত একটি স্থান করে দিন।